পাগল কুকুর



-সাহেব, সাহেব, বাঁচান আমারে। বাইরে অনেকগুলা কুত্তা দাঁড়াইয়া আছে। গেলেই আমারে কামড়াইয়া খাইয়া ফালাইবো।
-কী? কুকুর! কয়টা কুকুর?
-সাহেব, পুরা ৭৩ টা।
-বলিস কী? আমরাতো ৩টা কুকুরই কতো কষ্টে রোজ রাতে জোগাড় করি। আর বাড়ির সামনে ৭৩টা কুকুর আসবে কোথা থেকে?
-সাহেব, এই ৭৩টা কুত্তা আমি চিনি। এই ৭৩টা কুত্তা আমরা গত কয়েকদিন জবাই দিয়া গরুর গোস্তের বদলে মানুষগড়ে বোকা বানাইয়া হোটেলে খাওয়াইছি।
-এবার বুঝলাম করিম মিয়া। তুমি নেশা করে এসেছ। গাজা খেয়েছ বুঝি? মরা কুকুর আবার ফিরে আসে কেমনে?
- সাহেব, আমি নিজের চোখে দেখছি। কুত্তাগুলা কী ভয়ংকর! এখনো মনে হয় বাড়ির বাইরে দাঁড়াইয়া আছে। চোখগুলা রক্ত লাল। আমাগরে খাইতে আইছে। আমাগো পাপের শাস্তি দিতে আইছে।
-চুপ কর, করিম মিয়া। আমরা কোনো পাপ করছি না। কুকুরের মাংস থেকে যদি ব্যবসা হয় তাহলে ক্ষতি কী! এমনিতে কুকুরগুলোতো রাস্তাতেই পড়ে থাকে। কারো কোনো কাজে আসে না।
-তা আমি বুঝি না, সাহেব। বাইরে ৭৩টা কুত্তা, আমি গুণছি। এরা আমাগরে মাইরা ফেলবো।
.
.
করিম মিয়ার এই অদ্ভুত কথা শুনে বেশ চটে যায় জীবন সাহেব। তিনি একজন হোটেল ব্যবসায়ী। তবে বর্তমানে অধিক মোনাফার লোভে প্রতিরাতেই গরুর বদলে কুকুর জবাই দিয়ে কাজ চালিয়ে দেয়। এটা ধরার মতোও কেউ নেই। এ পর্যন্ত গুণে গুণে ৭৩টা কুকুর জবাই দিয়েছে, সে আর করিম মিয়া। তার মনে হচ্ছে করিম মিয়া আজ নেশা করে এসেছে। নাহলে মরা ৭৩টা কুকুর আবার ফিরে আসে কী করে! করিম মিয়াকে ভূল প্রমাণ করতে জীবন সাহেব নিজেই বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে এলেন। এরপর যা দেখলেন, তা দেখার জন্য তিনি মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। দেখলেন করিম মিয়ার কথাই ঠিক। তার উঠানে সাড়ি সাড়ি কুকুর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবগুলো কুকুরেরই লাল চোখ। কী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাদের! জীবন সাহেব কয়েকটা কুকুরকে যেনো চিনতে পারলেন। সামনের সাড়ির এই ছোট কুকুরটাকেতো তিনি গত কালই জবাই দিয়েছিলেন। কী চিৎকার করেই না কাঁদছিল এই কুকুরটি, জবাই হওয়ার সময়। বাকি কুকুরগুলোকেও চিনতে তার বেশি দেরী হলো না। এই ৭৩ টা কুকুরকেই সে আর করিম মিয়া মিলে এতদিন জবাই করেছিল। এটা ভেবেই, গা শিহরে উঠল জীবন সাহেবের। তিনি আর কিছু ভাবার আগেই কুকুরগুলো ভয়ংকর কন্ঠে "ঘেউ ঘেউ" করতে লাগল। আজ কী ভয়ংকর তাদের ডাক! জীবন সাহেব দু হাত দিয়ে তার কান চেপে ধরলেন। পালানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু ততক্ষণে তার পা অবশ হয়ে গিয়েছিল। কুকুরগুলো মুখে ভয়ংকর শব্দ করতে করতে, ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। ভয়ে চিৎকার করতে চাইলেন তিনি। কিন্তু তার গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হচ্ছিল না।
.
.
পরের দিন সকালে জীবন সাহেবের বাড়িতে অনেক মানুষের ভীর দেখা যায়। পুলিশ,গোয়েন্দা,মিডিয়া সব এসে হাজির। জীবন সাহেবের বাড়ির উঠানে দুটি ছিন্নভীন্ন, রক্তাক্ত লাশ পড়ে রয়েছে। একটি জীবন সাহেব এবং অপরটি করিম মিয়ার। সবার ধারণা কোনো ভয়ংকর পাগল কুকুর তাদের কামড়ে মেরেছে।

No comments

Powered by Blogger.